মহাবিদ্যা তারার গণেশপত্নীবাদের খণ্ডন

 মহাবিদ্যা তারার 'গণেশপত্নীবাদ'এর খণ্ডন 

সূচনা :— 

"আমার মা ত্বং হি ৺তারা, তুমি ত্রিগুণধরা পরাৎপরা, মা ত্বং হি তারা।"

দশ মহাবিদ্যার মধ্যে দেবী তারা দ্বিতীয় মহাবিদ্যা। আদ্যাপরাশক্তির অন্যতম প্রসিদ্ধ এবং পূজনীয় রূপ তিনি। বাঙালিদের প্রিয় তারাপীঠ মন্দির ও শ্রীপাদবামদেব। তবে বর্তমান সময়ে কিছু ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে দেবীর নামে ভ্রান্ত ধারণা ছড়িয়ে দিচ্ছে। এরা প্রকৃত শাক্ত নন, অথচ “শাক্ত” সেজে দেবীর সত্যভক্ত এবং শক্তি-উপাসকদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এদের মধ্যে কেউ আবার শঙ্করাচার্য প্রচলিত (অদ্বৈত) মত অনুসরণকারী, কেউ গাণপত্য গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত, আবার কেউ এক প্রকার অদ্ভুত মিশ্র সম্প্রদায়— খেচরান্নবাদী, যাদের মতবাদে খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, ও হিন্দু বিভিন্ন ধারণার অদ্ভুত সংমিশ্রণ দেখা যায়। 

সদ্যোজাতসহিত ভগবতী ৺তারা (সিদ্ধান্তথাপানের চিত্র)


বিভিন্ন ধর্মীয় ধারার প্রকৃত সাধকরা নিজেদের নিজস্ব পথে স্থিত থাকেন; কিন্তু যারা নির্বিচারে সকল সম্প্রদায়ে হস্তক্ষেপ করে, ধর্মে তাদের কোনো বৈধ স্বীকৃতি নেই। এই খেচরান্নবাদীদের মতে, আদ্যাশক্তি তারিণী — মহাবিদ্যা তারা — এর স্বামী নাকি উচ্ছিষ্ট গণপতি। এই দাবিকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তারা নানাবিধ তথাকথিত ধর্মগ্রন্থের দোহাই দেয়।

কিন্তু, আসলেই কি তাই?

চলুন দেখি — প্রকৃত উচ্ছিষ্ট গণপতির সহধর্মিণী কে?

উত্তর কামিকাগম অনুযায়ী উচ্ছিষ্ট গণপতির পত্নী হলেন ভগবতী বিঘ্নেশ্বরী; মহাবিদ্যা তারা নন। 

উৎসঙ্গে নিহিতাং দেবীং সর্বাভরণভূষিতাম্ । দিগম্বরাং সুবদনাং ভুজদ্বয় সমন্বিতাম্ ॥৪৬॥

বিঘ্নেশ্বরীতি বিখ্যাতাং সর্বাবয়বসুন্দরীম্ । পাশহস্তাং তথা গুহ্যং দক্ষিণেন করেণ তু ॥৪৭॥ 

[[ তথ্যসূত্র— উত্তর কামিকাগম, ৪৫তম অধ্যায়]]

অর্থ :—“দেবী উচ্ছিষ্ট গণেশের কোলের উপর উপবিষ্টা, বিভিন্ন অলঙ্কারে ভূষিতা, দিগম্বরী (বস্ত্রহীনা), দীপ্তিময়ী এবং দ্বিভুজা। সেই সর্বসুন্দরী দেবী ‘বিঘ্নেশ্বরী’ নামে পরিচিত, যিনি বিঘ্ন নাশ করেন। এক হাতে তিনি ধারণ করেছেন পাশ (ফাঁস), আর অপর হাতে স্পর্শ করছেন গণেশের শিশ্ন।”

মিথ্যাদাবীসমূহ


🔴 মিথ্যা দাবি ১ :—

বিরোধীরা বলে থাকেন— উচ্ছিষ্ট গণপতির কিছু মন্ত্রে তাঁকে “নীলসরস্বতীর পতিঃ” বলা হয়েছে। অতএব, তাদের মতে, তিনিই নাকি তারার স্বামী।

🟢 খণ্ডন ১:

“নীলসরস্বতী” উপাধি একাধিক দেবীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যেকোনো নীলবর্ণা, বাগ্বিদ্যা ও জ্ঞানশক্তির অধিষ্ঠাত্রী দেবীকেই নীলসরস্বতী বলা যেতে পারে। এমনকি বিষ্ণুপ্রিয়া সরস্বতীর নীলবর্ণ রূপকেও এই নামে ডাকা হয়।

কিন্তু দেবী তারা শুধু নীলসরস্বতী নন —তিনি মহানীলসরস্বতী —অর্থাৎ সকল নীলসরস্বতীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ও পরমরূপ।

আগমকল্পলতা, তারাতন্ত্র, তারাভক্তিসুধার্ণব, বীরচূড়ামণি তন্ত্র প্রভৃতি শাস্ত্রেও উগ্রতারাকে “মহানীলসরস্বতী” (महानीलसरस्वती) বলে সম্বোধন করা হয়েছে। 

মুণ্ডমালা তন্ত্রে বলা হয়েছে, 

প্রণমেৎ পার্বতীং দেবীং মহানীলসরস্বতীম্ ।

উগ্রতারাক্রমং বক্ষ্যে দেবানামপি দুর্লভম্ ॥৮১ ॥

[[মুণ্ডমালা তন্ত্র: ৬ পটল]]

যদি মুণ্ডমালা তন্ত্র মধ্যযুগীয় নব্যতন্ত্র, তাই তার দোহাই দিয়ে একে খেচরান্নবাদীরা মান্য নাই বা করতে পারেন, সেক্ষেত্রে তারাকুলসাধকদের বক্তব্য দেখতে হবে,— 

উর্জিতানন্দগহনাং সর্ব-দেব-স্বরূপিণীম্ ।

পরাং বাগ্রূপিণীং বন্দে মহানীলসরস্বতীম্ ॥

স্বপ্রকাশ-বিমর্ষাখ্য-বীজাদ্যঙ্কুররূপিণীম্ ।

পূর্ণানন্দময়ীং বন্দে মহানীলসরস্বতীম্ ॥

[[তথ্যসূত্র:— শংকর আগমাচার্য কৃত তারারহস্যবৃত্তিকা]]

অনুবাদ : “আমি মহানীলসরস্বতী (উগ্রতারাকে) প্রণাম জানাই —যিনি ঊর্জিতানন্দ (Ūrjitānanda - ऊर्जितानन्द), সকল দেবতার সমষ্টিরূপা, এবং দিব্যবাকের সর্বোচ্চ ও পরমরূপ। তিনি স্বয়ং প্রকাশ ও বিমর্ষাত্মিকা, পরিপূর্ণ পরমানন্দময়ী।আমি সেই মহানীলসরস্বতীকে প্রণতি জানাই।”

বিঃদ্রঃ শঙ্কর আগমাচার্য (शंकर आगमाचार्य) তারাকুলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাধক। তিনি গৌড়ীয় শঙ্করাচার্য (गौडीय शंकराचार्य) বা শঙ্কর শাক্তাচার্য (शंकर शाक्ताचार्य) নামেও পরিচিত। তিনি ১৬শ শতাব্দীর সাধক। তাঁর সঙ্গে শংকারচার্য সম্প্রদায় অথবা জড়ব্রহ্মবাদীদের (Advaitya-Śaṅkarite) কোনো সম্পর্ক নেই। তাঁর "তারারহস্যবৃত্তিকা" গ্রন্থে স্বচ্ছন্দতন্ত্রের মত ত্রিকাগম/কাশ্মীরি আগম-কে উদ্ধৃত করে তিনি তারাকুলীয় দর্শন ব্যাখ্যা করেছেন।

আরেক তারাক্রম সাধক শ্রীপাদ বিশ্বেশ্বর আচার্য (খ্রিস্টাব্দ ১৪৩৮) তাঁর “তারা সহস্রনামব্যাখ্যা — অভিধার্থচিন্তামণি”

(तारासहस्रनामव्याख्याऽभिधार्थचिन्तामणिः) গ্রন্থে ‘মহানীলসরস্বতী’ সম্বন্ধে বিশদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন —

বাগদেবী (বাণী), লক্ষ্মী (সিন্ধুজা) এবং কুন্দাক্ষী (মৈত্রায়ণী) —এই ত্রিদেবীরই জননী হলেন গিরিজা দেবী। দেবী পার্বতীই স্বয়ং সমস্ত মহাবিদ্যার রূপ ধারণ করেছেন একাই।

🔴 মিথ্যা দাবি ২ :—

স্বানন্দ গণেশই সর্বোচ্চ তত্ত্ব। তিনিই সর্বোচ্চ “শক্তিমান”।

অতএব, তাঁকে পরাশক্তি তারার স্বামী বলা যেতে পারে।

🟢 খণ্ডন ২ :—

স্বানন্দ গণেশ তাঁর নিজস্ব সম্প্রদায় — ‘গাণপত্য ধর্মে’ সর্বোচ্চ দেবতা। কিন্তু দেবী তারা বিশুদ্ধ শাক্তধর্মের দেবী —গাণপত্য ধর্মে তাঁকে কখনও পূজা করা হয় না।

এই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয় — যে তিব্বতে দেবী তারার ঐতিহ্য সর্বাধিক সমৃদ্ধ, সেখানে গাণপত্য ধর্মের কোনো ধারণাই নেই! 

✅ শাক্তদর্শনে গণেশের স্থান:— 

শাক্ত আচার্য শ্রীপাদ ভাস্কর তাঁর গ্রন্থসমূহে (যেমন— সৌভাগ্য রত্নাকর, গুপ্তবতী ইত্যাদি) শাক্ততত্ত্ব ব্যাখ্যা করার জন্য স্বচ্ছন্দ তন্ত্র-এর অবলম্বন করেছেন।

সেখানে অষ্টপাশ (৮টি আদ্যসীমা) সম্পর্কে বলা হয়েছে —

এই অষ্টপাশ হলেন —

দেবী নন্দি মহাকালো গণেশো বৃষভস্তথা । 

ভৃঙ্গী চণ্ডীশ্বরশ্চৈব কার্তিকেযোऽষ্টমঃ স্মৃতঃ॥ 

[[স্বচ্ছন্দতন্ত্র— দশম পটল]]

১) দেবী (গণাম্বিকা, পার্বতীর পার্ষদ),২️) নন্দী (বানর­মুখ দ্বাররক্ষক), ৩️) মহাকাল (এটি শিবের মহাকাল রূপ নয়, ভিন্ন দ্বাররক্ষক), ৪️) গণেশ, ৫️) ঋষভ, ৬️) ভৃঙ্গী, ৭️) চণ্ডীশ্বর এবং ৮️) কার্তিকেয়।

এ সকল অষ্টপাশ কোনোভাবেই পরাশক্তিকে গ্রথিত করতে পারে না। কারণ —পরাশক্তি কেবল প্রকাশ-শিবের কোলে আসীন হন, যিনি তাঁকে ধারণ করতে সক্ষম।

এখন, খেচরান্নবাদীরা এখানে বলার চেষ্টা করে — এই গণপতি একাক্ষর গণপতি, স্বানন্দ গণেশ নন।

কিন্তু — এই কৈলাস ভৌত জগতের কৈলাস নয়।

স্বচ্ছন্দ তন্ত্র অনুসারে —

"অত এব কে মূর্ধন্যে ব্রহ্মবিলে এলা স্ফুরন্তী শক্তিঃ তস্যামাসঃ আসনমুপরিস্থিতির্যস্য, ব্যাপিনীসমনাত্মনঃ শিখরস্য সর্বাধ্বোপরিবতীনঃ পদস্য, তত্ কৈলাসশিখরম্"

কৈলাস ব্যাপিনী, উন্মনা, সমনা স্তরের উপরে অবস্থিত। 'সমনা'কে স্বচ্ছন্দতন্ত্রে মহাশূণ্য বলা হয়েছে, যা কাল ও মায়ার অতীত। যেকোনো দেবতার এইস্তরে অধিষ্ঠিত রূপটিই তাঁর সর্বোচ্চ রূপ। কারণ, এর উপরের স্তরটি হল পাশবিহীন শুদ্ধ নিরঞ্জনাবস্থা। সেখানে কোনো পাশের উপস্থিতি থাকতে পারে না। উন্মনার ঊর্ধ্বে রয়েছে শিবশক্তির Imperceivable Nature বা চিদোল্লাসময় অবস্থা। এই স্তরে সকল পাশের লয় ঘটে।

একাক্ষর গণপতি সহ গণেশের অন্যান্য প্রতিরূপগুলি এই স্তরগুলির উর্ধ্বে নয়। অতএব, এখানে উল্লিখিত গণেশ শুধুমাত্র স্বানন্দেশ গণপতি — অর্থাৎ সর্বোচ্চ গণেশ তত্ত্ব।

রুদ্রযামল মহাতন্ত্র অনুযায়ী
উচ্ছিষ্ট গণপতি হলেন আদ্যাপরাশক্তি পার্বতীর পুত্র।

📌 প্রমাণ —
উচ্ছিষ্ট গণেশ কবচ-এ বলা হয়েছে —
“পঞ্চমোদকরঃ পাতু পাতু মাং পার্বতীসুতঃ”
উচ্ছিষ্ট গণপতি ধ্যান-এ বলা আছে —“সুরতপ্রবর্ত্তমুচ্ছিষ্টমম্বাসুতমাশ্রয়েঽহম্”
অর্থঃ — আমি কামসঞ্চারক উচ্ছিষ্ট গণপতি —পার্বতীর পুত্র — তাঁকেই আশ্রয় করি।
এ উক্তি মন্ত্র মহোদধি গ্রন্থেও পুনরুক্ত হয়েছে।

সুতরাং —
উচ্ছিষ্ট গণপতি তন্ত্রমতে পার্বতী-নন্দন,
কোনোভাবেই মহাবিদ্যা তারার স্বামী নন।


তাহলে মহাবিদ্যা তারা-র মহাভৈরব (সহধর্মচারী) কে?:— 

এর উত্তরে
শিব মহাপুরাণ স্পষ্ট বলে —
তারনামা দ্বিতীয়শ্চ তারাশক্তিস্তথৈব সা। 
ভুক্তিমুক্তিপ্রদৌ চোভৌ স্বসেবকসুখপ্রদৌ॥
[[শিব মহাপুরাণ: শতরুদ্র সংহিতা: অধ্যায় ১৭]]
অর্থ : “পরমশিবের দ্বিতীয় অবতার হল তারা (तार), তাঁর স্ত্রী হলেন তার (तारा)। এরা দু’জনে একসঙ্গে ভোগ ও মোক্ষ প্রদান করেন।”

রুদ্রযামল অনুযায়ী, তারভৈরবকে বলা হয় সদ্যোজাত — 
সদ্যোজাতস্তু তারায়াঃ শিব ইত্যেবমীশ্বরি ॥
[[ রুদ্রযামল: পরাদেবীরহস্যতন্ত্র: শিবপটল]]

সদ্যোজাতের অন্য নাম অক্ষোভ্য (अक्षोभ्य)।
কিন্তু প্রাচীনকালে এই নামটি এত জনপ্রিয় ছিল না।
বজ্রাযানী বৌদ্ধরা সদাশিবের ৫টি রূপ নকল করে
তারা পঞ্চ-ধ্যানী-বুদ্ধ রূপ তৈরি করে।
এরপর সদ্যোজাতের বুদ্ধরূপকে তারা অক্ষোভ্য নামে  ডাকতে শুরু করে।

অক্ষোভ্য (अक्षोभ्य) সম্পূর্ণরূপে শিবের এক প্রকাশমাত্র। উদ্ধৃতি — তারা ভক্তি সুধার্ণব:

মমোর্ধ্ববক্ত্রান্নিঃসৃত্য তেজোরাশিবিনির্গতঃ ।
হৃদে চোলে নিপত্যৈব নীলবর্ণাঽভবৎ পুরা ॥"

> “আমার ঈশান নামক ঊর্ধ্ববক্ত্র , এক বিপুল দীপ্তিশালী শক্তি প্রবাহিত হলো।
যখন এটি আমার হৃদয়ের মধ্যস্থিত হ্রদের উপর পড়ল,
এবং এটি গভীর নীল রঙ ধারণ করল।”

"হৃদস্য চোত্তরে ভাগে ঋষিরেকোऽভবত্ততঃ ।
অক্ষোভ্যনাম চাশ্রিত্য মুনিবেশধরঃ শিবঃ ॥"

>“আমার হৃদয়হ্রদের উত্তরাংশ থেকে, তখন এক মহান ঋষি জন্ম নিল।
তিনি 'অক্ষোভ্য' নামে পরিচিত হন এবংনিজেই শিবের সত্তা অবলম্বন করে ঋষির রূপ ধারণ করলেন।”

🔴 মিথ্যা দাবি ৩ :—
“তারা যামল” গ্রন্থে বলা হয়েছে গণেশই তারার স্বামী।
রুদ্রযামলে বলা হয়েছে সদ্যোজাত হাতির মাথাযুক্ত।

এখন খেচরান্নবাদীরা রুদ্রযামল মহাতন্ত্রকে ভুয়ো উদ্ধৃতি দিয়ে একটি ভুয়া ধ্যান তৈরি করেছে।
---

🟢 খণ্ডন :—

প্রথমত, কোনো প্রামাণিক শাস্ত্র হিসেবে ‘তারা যামল’ (तारा यामल) পরিচিত নয়।
যদি কেউ এমন উল্লেখ করে, তা হয় ভ্রান্ত যুক্তি বা অবৈধ দাবি। প্রামাণিক উৎসের মধ্যে এর কোনো উল্লেখ নেই।
তাছাড়া, যামলাষ্টক বা ৫২টি উপ-যামল তেও নেই।

স্কন্দ যামল, যা ৫২টি যামলের তালিকা দেয়,
এবং শ্রীকণ্ঠী সংহিতা, যা ৬৪টি তালিকাভুক্ত করে,
তেও ‘তারা যামল’-এর কোনো উল্লেখ নেই।
আর কোনো প্রামাণিক টীকাকার বা আচার্য এই গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত করেননি। অতএব, এমন দাবির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কোনো বাস্তব প্রয়োজন নেই, কারণ এগুলির বেশিরভাগই স্পষ্টভাবে ভিত্তিহীন।
শাক্ত তন্ত্রই মহানীলসরস্বতী বা তারা-র প্রকৃতি ও পরিচয় স্পষ্টভাবে জানায়। 

প্রকৃতপক্ষে, গণেশবিমর্শিনী (गणेशविमर्षिणी) —
একটি প্রামাণিক গাণপত্য গ্রন্থ — ২.৮৫.৬৯-এ এটি নিশ্চিত করে যে, 
"নীলসরস্বতীং যোজযামাস হ্যক্ষোভ্যেন গণাধিপঃ"
উচ্ছিষ্ট গণপতি তাঁর কন্যা নীলসরস্বতীকে অক্ষোভ্যের হস্তে সম্প্রদান করলেন।
নকল শ্লোক ও পোস্ট 



✅ ভুয়ো শ্লোকের ব্যাকরণগত ভুলের ব্যাখ্যা— 

1. “क्रोरे”/ক্রোরে —
এ ধরনের শব্দ সংস্কৃতে নেই। এটি সম্ভবত হবে “क्रोडे”/ক্রোড়ে, অথবা “तारायाः पार्श्वे” / “या तारायाः पार्श्वमारूढं”।
উদ্দেশ্য হল “পার্শ্বে” বা “কোলের উপর” বোঝানো, যা pārśva (পার্শ্ব) বা aṅka (অঙ্ক) দ্বারা ভালোভাবে প্রকাশ করা যায়।
2. sanniṣaṇṇa (সন্নিষণ্ণ/উপবিষ্ট) —
ব্যাকরণগতভাবে সঠিক হলেও,
যদি কোনো দেবীর কোলে বা পার্শ্বে বসা বোঝাতে হয়, তবে ārūḍha (আরূঢ়) শব্দটি বেশি উপযুক্ত।
3. বেদবাহু/बेदबाहु(বর্গীয়-ব) —
ভুল।
সঠিক রূপ হলো বেদবাহু/वेदवाहु(অন্তস্থ ওয়)।
4. कुंजरास्यं / गजमुखं —
উভয়েই “হাতিমুখ” বোঝায়,
কিন্তু গজমুখ শব্দটি বেশি প্রচলিত ও প্রামাণিক।
5. कर्तृकपालवज्ज्रकं —
“বজ্রকং” ভুল।
সঠিক রূপ হবে বজ্রিণং, যা বজ্র) + ইণ্ (ধারক) থেকে গঠিত — অর্থাৎ বজ্রধারী।
6. दधतं / Dadhatam —
এটি কম স্পষ্ট।
धारयन्तं / Dhārayantam (ধারণকারী / বহনকারী) ব্যাকরণগতভাবে পরিষ্কার এবং যথার্থ।
7. ध्याये / Dhyāye —ভুল।
“ধ্যান করা উচিত” অর্থে সঠিক শব্দরূপ হলো ध्यायेत् / ধ্যায়েৎ (৩য় পুরুষ একবচন)।
এই নকল  শ্লোকটি রুদ্রযামল তন্ত্রের তারা পঞ্চাঙ্গ এবং খণ্ডে নেই। সবচেয়ে হাস্যকর, "তারাক্রোড়েসন্নিষণ্ণং" বলতে তারামায়ের কোলে গণপতির অবস্থানকে বোঝাতে, যেমন "শিবাঙ্কনিলয়া" মানে শিবের কোলে অবস্থিতা গৌরীকে বোঝায়। গণেশকে সদ্যোজাত বানাতে গিয়ে খেচরান্নবাদীরা পরোক্ষে তাঁকে ৺তারাপুত্রই বানিয়েছেন। এটিই তারামায়ের লীলা!

তবে যেটি আসল শ্লোক পাওয়া যায়,
রুদ্রযামলের অগ্নিকার্যপদ্ধতি-তে সদ্যোজাত শিবকে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে —নতুন উদিত সূর্যের মতো দীপ্তিমান,
হাতে খড়্গ (তলোয়ার) ও ইন্দীবর (নীল পদ্ম),
ত্রিনেত্র, মুকুটে চন্দ্রশিখর অলঙ্কৃত —
আমি সদ্যোজাত শিবকে প্রণাম জানাই। 
অগ্নিকার্যপদ্ধতি : পাণ্ডুলিপি নম্বর: ৭৮১,
গবেষণা গ্রন্থাগার, জম্মু ও কাশ্মীর সরকার, শ্রীনগর। 

সদ্যোজাতভৈরবল্লভা তারার জয়!

Comments

Popular posts from this blog

Durga Krama : A Short Description

Who is the main deity of Durga Kula? Is it Ashtabhuja Durgambika or Chaturbhuja Jagadhatri?

Kalikula : A Brief Overview